সাকি (সম্পূর্ণ)

 


সাকি"পর্ব ০১"


স্যার আপনার সাথে দেখা করতে একটা ছেলে এসেছে।
নাম কি?
সাকি।
সাকি!এ নামে আমি কাউকে চিনিনা।
কি বলেন;সে তো বললো,সে আপনার অনেক কাছের মানুষ।
তাই,কিন্তু...
ও সে বলেছে,সে আপনার শ্যালক।
শ্যালক!আমারতো শ্যালক একজন-ই শাকিল।
শাকিল-সাকি,I see আচ্ছা বসতে বলো।

তাহলে আমার অনুমানই সত্যি হলো।তা তুমি কবে থেকে শাকিল থেকে সাকি হলে?
যখন থেকে আমি হিমু প্রেমে আবদ্ধ হলাম।
এই হিমুটা কে?
একজন মানুষ।
তা তো বুঝলাম,সে কি মেয়ে না ছেলে?
ছেলে।
কি তুই একটা ছেলের প্রে..
না.না তুমি যা বুঝছো তা নয়।
তাহলে?
তুমি হুমায়ুন স্যারের হিমু উপন্যাসের নাম শুনোনি?
ও ঐ হিমু।তা হিমুর ভূত কবে থেকে মাথায় ঢুকলো?
তুমি ভূত বলছো কেনো?
কেননা হুমায়ুন স্যার মারা গেছে তারমানে হিমু আর আসবে না নতুন কোনো উপন্যাসে।
ও তাই।
হুম,তা তুমি আমার কাছে কি চাও?
চাকরি।
তোমার তো এখন পর্যন্ত লেখাপড়াই শেষ হয়নি।তোমাকে কে চাকরি দেবে?
কেনো আপনি।
No Never.
তাহলে তো আর কিছু করার নেই।
তা হিমুর মতো হতে চাচ্ছো নাকি?
না।
তবে যে বললে তুমি হিমুর প্রেমে পড়েছো।
হ্যাঁ।
তাহলে তার মতো হবে না?
না।
তবে প্রেমে পড়ে লাভ কি,যদি তার মতো না-ই হও।
যার প্রেমে পড়বো তার মতোই হতে হবে,এমন কোন কথা আছে নাকি?
না তা নেই,তবে তুমি যে বললে তার প্রেমে পড়ে তুমি তোমার নাম বদলেছো।
হ্যাঁ
আচ্ছা হিমু আর সাকি'র মধ্যে আমি তো কোনো মিল খুঁজে পাচ্ছি না।
আছে।
কিভাবে?
হিমু লিখতে দুটি অক্ষর লাগে আর সাকি লিখতেও দুটি অক্ষর।
এটা কেমন মিল।
হ্যা এটাও এক ধরনের মিল।
তুই কি পাগল?
হ্যা।
মানে?
হ্যা আমি পাগল,পৃথিবীর সব মানুষ ই পাগল।আমি বইয়ের পাগল।
তুই কি আমার সাথে ফাজলামি করিস?
না।
তাহলে এ সব ফালতু বকবক কেনো করছিস?
কোন বকবক?
তুই এখন যা, তোর সাথে কথা বলার কোন ইচ্ছাই আমার নেই।যা এখন বাগ..যা।
আচ্ছা যাচ্ছি, আপাকে আমার সালাম জানাবেন।
আচ্ছা জানাবো।
ও দুলাভাই...
আবার কি?
কিছু টাকা দার দিবে?
তোমাকে দার,সে টাকা আর ফেরত পেতে হবে না।তবুও বলো,কতো?
পাঁচশত টাকা
এই নেও।
আমি সামনের মাসেই..
নাহ, ওটা আর লাগবেনা।
ধন্যবাদ দুলাভাই!
আবার যাও বলছি।

কি হে সাকি?
কে?
আমি আকাশ।
ও তুই।তা তুই আমাকে সাকি বললি কেনো?
এটাই নাকি তোর বর্তমান নাম।
হু
তুই কোথায় জানলি?
আকাশ থেকে।
মানে?
এ সব বাদ দে তো,তা হিমুই যখন হতে চাস তাহলে হিমুর মতো পোশাক কোথায়?
আমি হিমু হতে চাই বলে কি আমাকে হিমুর মতো পকেট বিহীন হলুদ পাঞ্জাবি, খালি পায়ে হাঁটতে হবে?
অবশ্যই।
তা কেনো?
বাহ্ তুই হিমু হবি আর হিমুর হলুদ পোশাক পড়বি না তা তো হবে না।
আমি চারিত্রিক দিক দিয়ে হিমুর মতো হতে চাই,আমি হিমুর মতো ভাবতে চাই।কিন্তু হিমুর পোশাক ওটা হিমুর জন্যই মানানসই। ওটা আমার জন্য নয়।
তোর সাথে কথা বলে লাভ নেই,তুই মস্তবড় পাগল,
আচ্ছা নতুন দিনের হিমু আজ আসি পরে কথা হবে।
আচ্ছা।
ও শোন,হিমু তো রাতে হাঁটে। তুই দিনে হাঁটছিস?
তুই গেলি..


হ্যালো!
কে বলছেন?
স্যার আমি বক্কর।
তা তুমি কি চাও?
স্যার আপনার সাথে আজ দেখা করার কথা ছিলো।
কি নিয়ে?
স্যার আজ পাওনা টাকাটা দেবার কথা ছিলো।
কতো?
দুই হাজার।
ও,তা তুমি কোথায়?
আপনার বাসার নিচে।
ও বক্কর ভাই আমি তো বাসায় নেই, তুমি আগামী সপ্তাহ আসো।
আচ্ছা।

ওহ্ এখন আরামছে বাসায় যাওয়া যাবে।কেউ বিরক্ত করবে না।

ও স্যার..ও স্যার...
কে?
আমি বক্কর।
তুমি যাওনি?
না,টাকাটা দরকার স্যার।
আচ্ছা দেখি কি করা যায়।
বাবা..
কি হইছে?
বাবা কিছু টাকা দরকার।
কতো?
দুই হাজার।
কে পাবে?
বক্কর ভাই।
এ নিয়ে তোমাকে আমি দুই লাখের ও বেশি টাকা দিলাম,আজ-ই শেষ।যাও আলমারি থেকে নিয়ে নাও।
আচ্ছা বাবা।
এই নেও বক্কর ভাই তোমার তিন হাজার টাকা।
তিন হাজার?স্যার আমি তো দুই হাজার পাবো।
দুই হাজার পাবে,আচ্ছা নিয়ে যখন এসেছি তখন রেখে দেও।তোমার না অনেক দরকার।
স্যার আপনি আমার অনেক বড় উপকার করলেন।
স্যার আপনি মানুষ না আপনি....
আর বলো না,ধর্ম ত্যাগ করাবে নাকি?
এখন যাও.
আচ্ছা স্যার।

ওহ্ স্যার ডাকটা শুনে শুনে আমি পাগল হয়ে গেলাম।এখন একটু ঘুম দরকার।মা আমি ঘুমাতে গেলাম,মাঝরাতে খাবারের জন্য ডেকো।

কি?মাঝরাতে খাবার, ঐ তুই কি পাগল হলি।
মা ঘুমের দোয়াটা যেনো কি?আমি ভুলে গেছি।
তোর মাথা,এতবড় দামড়া হইছে আর ঘুমের দোয়া পারেনা।তা এখন তোমার ঘুমের দোয়া লাগবে কেনো?
ঘুমটা ভালো হবে।তুমি বলো...
"‘আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া-আহ হিয়া
"


সাকি"পর্ব ০২"


"এ গহীন রাতে তোমা বিহনে একাকীত্ব অনুভব করছি,ওহে কল্পনার রাজকন্যা।
এখন আর স্বপ্ন দেখিনা তোমায় নিয়ে,
রাতগুলো ছেয়ে আছে বিষন্নতায়।
ঘুমগুলো কাটছে অদেখা স্বপ্নে।
আজ আর ঘুম নেই আমার চোখে,
কেননা তুমি দূর থেকে বহু দূরে।
আমি এখনও আছি অপেক্ষার মায়াজালে
তোমার জন্য একরাশি ভালবাসা নিয়ে।"


সাকি ভাই কেমন হয়েছে কবিতাটা?
এটা কেমন কবিতা?
বিরহের।
সারাদিন শুধু বিরহের কবিতা লিখিস,সুখের কবিতা লিখতে পারিস না?
মানুষ বিরহের গল্প,কবিতা,গান বেশি ভালবাসে।
তাই।
হ্যা ভাই গতবছর আলোচিত গান 'অপরাধী'
আলোচিত নাটক'বড় ছেলে,বুকের বাঁ পাশে'আলোচিত বাংলা মুভি'মনপুরা' এ সবই কষ্টের।
ও,আচ্ছা বাংলার মানুষ কি এতই দুঃখী?
তা হবে হয়তো,ভাই আজকাল মানুষ কষ্টের গান ই বেশি শুনে।যেখানে যাই সেখানেই কষ্ট।
তা কষ্ট থাকা ভালো,তোর কি কষ্ট রাকিব?
ভাই আমার আবার কষ্ট, বলা শুরু করলে শেষ হবে না।
তাও বল শুনি,হাতে অনেক সময় আছে।হিমুদের হাতে প্রচুর সময়।
ভাই স্কুল জীবনে একটা মেয়েকে খুব ভালোবাসতাম, কখনো তাকে বলতে পারিনি।একদিন সাহস করে বাসা থেকে বের হলাম আজ তাকে বলবো।
তারপর।
স্কুলে ওর বান্ধবীদের জিজ্ঞেস করি ও কোথায় ওরা পুকুরের দিকে ইশারা করলো।
আমি ঐখানে গিয়ে যা দেখলাম তাতে আমার চোখ কপালে উঠলো।
তুই কি দেখলি?
ভাই ভাষায় বলার মতো না।
এতো না পেঁচিয়ে সহজে বল।
ও একটা ছেলের সাথে জড়াজড়ি করে শুমা খাচ্ছিলো।
শুমা?
না মানে চুমা।
ওহ্ তাই বল,আমি আবার কি থেকে কি ভাবলাম।
তারপর আমার কি কষ্ট?এইতো এটাই।
এটা কষ্ট,দুত মিয়া তুমি আমার সময়টাই নষ্ট করলে ফালতু কাহিনি শুনিয়ে।আমি যাই..
ভাই আর একটা আছে।
তোমার কাহিনি তোমার কাছে রাখো মিয়া
আমি চললাম।

আসসালামু আলাইকুম চাচা!
ও আলাইকুমুস সালাম!
কেমন আছেন চাচা?
এইতো আল্লাহ যেমন রাখছে আর কি।
তা আল্লাহ আপনাকে এখন কেমন রাখছে?
বেশি ভালা না।কাজ নাই,টাকা-পয়সাও নাই।
আল্লাহ দিবে বলে বসে থাকলে কি আর কাজ পাবা।কাজতো তোমাকেই খুজতে হবে।
আমার কপালডা ভালা না সাকি ভাই।
কেমনে বুঝলা?
বুঝি সবই বুঝি,আল্লাহ আমার ভাগ্যে কিছুই রাখেনায়।আল্লার আমার দিকে খেয়ালই নাই।
ও তাই,আচ্ছা তুমি কি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ো?
না তা পড়া হয়ে উঠে না।
আগে নামাজ পড়ো তারপর বকবক করো।যাও আগে এশার নামাজটা পড়ে এসো।
নামাজ পড়লে কি দিবে?
হ্যা দিবে যাও।


হ্যালো কে?
আমি অনিক।
ও আচ্ছা, বল কি বলবি।
তুই একটু আমার সাথে দেখা করতে পারবি?
এখনই আসছি।

এই লেগুনা,এই দাঁড়াও
ভাড়া দেন সবাই,ভাই ভাড়াডা?আপু ভাড়াডা?
...........
ভাই ভাড়া দিবেন না?
হু..হুম দিবো।
ভাই একটু চাপবেন?টাকাটা বের করতাম।
আর কৈ চাপমু,জায়গা আছে কোনো;শালারা সিট বানাইছে।
ঐ শালারপুত এইখানে ছয়জন কেমনে বয়?এইডা কি ছয়জনের জায়গা?
হ ছয় জনের ই জায়গা,মোডা মানুষ বইলে জায়গা হইবো কেমনে।
হইছে ভাই আর চাপা লাগবে না,টাকা বের করছি।

এই নে দশ টাকা।
দুই টাকা ভাংতি নাই পড়ে নিয়েন।
আচ্ছা।
{কিছুক্ষণ পর}
টাকাটা কি চাইবো,না থাক দুই টাকাই তো।
না এত কষ্টের টাকা,না থাক।
নিজে উপার্জন করি না তাই টাকার মর্ম বুঝি না,নিজে উপার্জন করলে এইভাবে দুই টাকা নষ্ট করতাম না।
ভাই......?
না, মেয়েগুলো কিভাবে তাকাইয়া রইছে।কি বলবে"এই দেখছোছ ছেলেটা কিভাবে দুই টাকা চাইতাছে।মনে হয় আর টাকা নাই।হা.হা.হা.হা.হা।"
না থাক দুই টাকাইতো আল্লার রাস্তায় দান কইরা দিলাম।
কিন্তু....ওরা যদি এই টাকা দিয়ে খারাপ কাজ করে তবে তো আমার পাপ হবে।তাও দুই টাকা চাওয়া আত্মসম্মানে লাগে।
কি করি????

ভাই আপনার দুই টাকা।
কি?
দুই টাকা।
দুই টাকা আবার দেওয়া লাগে।
আচ্ছা, দেও।
হাতে আমার দুই টাকা।না এ টাকা পকেটে ঢুকানো যাবে না।
ভিক্ষা দিয়ে দেই।

আল্লা রাস্তে দুইডা টাহা ভিক্ষা দেন।আল্লায় আপনাগো ভালা করবো।
চাচা এই নেন।
(ব্রু কুচঁকে)দুই টাহা।
(মিষ্টি হাঁসি) জ্বি চাচা।
কি চাচা আপনে বিড়ি খান?
হ খাই তাতে তোমার কি?
না মানে ভিক্ষার টাকায় বিড়ি?
(ব্রু কুঁচকে) দিছোতো দুই টাহা,তাও আবার বড় বড় কতা।
যান তো।
আচ্ছা...আচ্ছা..যাই চাচা।
তবে কি দুই টাকা জলে গেলো..


সাকি"পর্ব ০৩"


চল হিমু কোথাও ঘুরে আসি।
হিমু কে?
তুই।
আমি আবার হিমু হতে যাবো কেন।হিমু একটা কাল্পনিক চরিত্র আর আমি বাস্তবিক চরিত্র। ওর সাথে আমার কোন মিল নেই।আমি চাইলেও ওর মতো হতে পারবো না।
কিন্তু তুই-ই তো বলিস তুই হিমু হতে চাস।
হ্যা বলি,তাই বলে তো আর হিমু হয়ে যাবো না।আমি একটা মেয়েকে ভালবাসি এখন কি আমাকে ঐ মেয়েটির মতো হতে হবে?কখনো না।আমি তার মতো হতে চাই না আমি তাকে পছন্দ করি।
আচ্ছা বুঝলাম,এখন চল..
কোথায়?
তোর প্রেমিকার কাছে।
প্রেমিকা?কার।
তোর।
আমার প্রেমিকা?কে?কবে থেকে?কখন?
সুমাইয়া।
সুমাইয়া কে?
গাধা যার খাতা দেখে পরীক্ষায় পাস করলি তাকেই ভুলে গেলি।
ও..ঐ ফর্সা করে মেয়েটা?ওর নাম কি সুমাইয়া?
হ্যা
ও আবার আমার প্রেমিকা কবে থেকে?
ও তোমাকে খাতা দেখায় কি আর শুধু শুধু।সুমাইয়া তোকে পছন্দ করে বলে খাতা দেখায়।আজ তোকে নিয়ে ওর সাথে দেখা করতে বলেছে।
কোথায়?
টিএসসিতে।
আচ্ছা চল টিএসসিতে, অনেক দিন যাওয়া হয় না।
বুঝলি অনিক পৃথিবীর সব মানুষই সার্থপর,কেউ নিজের সার্থ ছাড়া একটা কাজও করে না।এই সুমাইয়া মেয়েটির কথাই দর ওকে আমি খুব ভালো ভাবতাম।ভাবতাম মেয়েটি নিঃসার্থভাবে আমায় সাহায্য করছে।কে ভেবেছে মেয়েটির মনে কি চলছে।
আচ্ছা মেয়েটি দেখতে কেমনরে অনিক?
কেন তুই কখনো দেখিসনি?
না।পরীক্ষার সময়তো ওর পিছনে বসতাম আর ওর লেখা শেষ হবার আগেই চলে আসতাম তাই কখনো ওর চেহারা দেখা হয়ে উঠেনি।
তবে আজই দেখে নিস কেমন চেহারা।
যদি খারাপ হয়,তবে?
খারাপ হবে না।
তুই কিভাবে বুঝলি?
মেয়েটা তো ফর্সা।
ফর্সা হলেই মেয়েরা সুন্দর হয় তুই কিভাবে বুঝলি?সুন্দর হতে গেলে ফর্সা লাগে না,কালোরাও সুন্দর হয় বুঝলি অনিক।
আচ্ছা বুঝছি,এবার কথা না বলে হাঁটতে থাক।
নিঃশব্দে আমি হাঁটতে পারিনা।আল্লাহ মুখ দিয়েছে কথা বলার জন্য আর সেই মুখ দিয়ে যদি কথা না বলি তবে বোবা হওয়ায় ভালো ছিলো।
আচ্ছা, টিএসসিতে এসে পড়েছি এবার চুপ থাক।
ওকে।
ঐযে নীল শাড়ি পড়া মেয়েটি দেখছিস?
হ্যা, ঐ মেয়েটি?
না ওর পাশে শুয়ে আছে যে মেয়েটি।
কি পাগল?
হা..হা..হা..
ঐ মেয়েটি পাগল নাকি।
আরে না নীল শাড়ি মেয়েটি।
তবে যে বললি পাগল মেয়েটি।
আরে তোর সাথে মজা করলাম।এবার যা..

আসসালামু আলাইকুম!
ওলাইকুমুস সালাম!
আমি কি বসতে পারি?
কোথায়?
আপনার পাশে।
আমার পাশে তো পাগলি শুয়ে আছে।ওর সাথে বসবেন?
না আপনার ডান দিকটায় বসবো।
আচ্ছা এতোই যখন বসতে চাচ্ছেন তবে বসুন।
ধন্যবাদ!
তোর ধন্যবাদের গুষ্টি কিলাই,এত দেরি করলি কেন?
না মানে এমনিতেই।
কি ভয় পেলে?
হুম।
হা..হা..হা..জানতাম ভয় পাবে।
তা হিমু সাহেব আমি কি আপনার রুপা হতে পারি?
না।
কেনো?
হিমুর সাথে রুপার কোন মিল হয় নি,হিমু কারো সাথে নিজের হাত বাঁধেনি।হিমুর পৃথিবী একা আর আমার পৃথিবী সবাইকে নিয়ে।
তাহলে আমি কি হবো?
তুমিতো সাকি'র সুমাইয়া হতে যাচ্ছো।
তাই।
হুম।চলো হারিয়ে যাই অরন্যে যেদিকে দুচোখ যায়।
"তুমি সুন্দর,অপূর্ব সুন্দর।তোমার গোলাপি মিষ্টি ঠোঁটের মিষ্টি হাঁসি সে আমায় ব্যাকুল করে তুলে।নীল শাড়ি তে তোমায় লাগছে অন্যরুপ,যেন ডানাকাটা পরী স্বর্গ হতে মর্ত্যে নেমে এলো।"
হয়েছে আমায় আর পটাতে হবে না,আমি এমনিতেও তোমার উপর পটে আছি ম্যারি জান।
তাই।
হুম।
চলো বিয়ে করে ফেলি।
কবে?
এখন।
এখন মানে এত তারাতারি।
আমি তোমায় হারাতে চাই না পরী।
তাই।
হুম।
বিয়ে করার জন্য এতো ব্যাকুল।
হ্যা।
আচ্ছা চলো তবে হয়ে যাই দুটি হাত এক।
চলো..


সাকি"পর্ব ০৪"


মা..ও মা..
কিরে ষাঁড়ের মতো চ্যাচাচ্ছিস কা?
মা নাস্তা দেও।
কিসের নাস্তা?
সকালের।
ঘড়িতে কয়টা বাজে?
একটা।
এখন নাস্তার সময় না দুপুরের খাবার সময়।
ঐ একটা হলেই হলো।তুমি দেও তো।
ফজর নামাজ পড়ছোছ?
না।
তা পড়বা কেন,তোমারতো জগৎ সংসারে অনেক কাজ।সারাদিন শুধু ঘুম আর ঘুম।
তুমি সজাগ করোনি তাই পড়তে পারিনি,আমার কি দোষ।
ও তোমাকে ঘন্টা বাজিয়ে সজাগ করতে হবে।যা গোসল করে যোহর নামাজ পড়ে আয়।তবেই ভাত পাবি।
এখন আবার গোসল করতে হবে।এমনে নামাজ পড়লে হয় না?
না হয় না,সারা রাত কি না কি করছে আল্লাহ মাবুদ জানে।যা গোসল করে আয়।
আচ্ছা যাচ্ছি।
ও মা..
আবার কি হইছে?
গরম পানি দেও।
নবাবের আবার গরম পানি লাগবো।সারাদিন আমি কাজ করতে করতে মইরা যাই এই বুড়া দামড়াডার লইগ্গা।এই বয়সে মানুষে বিয়ে করে সংসারি হয় আর ওনি এখনো মায়ের কোলে ঘুমায়।
হইছে আর লাগবো না তোমার গরম পানি।তোমার কথায় ঠান্ডা পানিই গরম হইয়া গেছে।..


মা নামাজ পড়ে আসছি এবার ভাত দেও।
সত্যি নামাজ পড়ছোছ নাকি বাহিরে ঘুরে আসলি।
তোমার বিশ্বাস না হলে সাথে করে সিসি ক্যামেরা দিয়ে দিতা।
তা দিতে পারলে তো দিতাম ই।
এবার ভাত দিবা?
এই নে..
শোন শাকিল.
শাকিল না সাকি।
হইছে তোর ঐসব হিমু-টিমু বাদ দে।
আমার কথা মন দিয়ে শোন।
মন দিয়ে শুনতে পারবো না।
কেন?
মন দিয়ে ভাত খাচ্ছি, এত কষ্টের পর ভাত পেলাম তাই আর কি।
ফাজলামি করবি না,জরুরি কথা বলছি শোন।
আচ্ছা বলো,
আর কতো দিন বেকার থাকবি একটা চাকরি-বাকরি কর তারপর সুন্দর দেখে একটা বউ আন।
বউ আনতে কি চাকরি লাগে?
তয় লাগে না,তোর মতো বেকাররে মেয়ে দিবে কেডা।
দেওয়া লাগবে না এমনেতেই চলে আসবে।
কিরে তুই কি কারো লগে প্রেম-ট্রেম করোসনি?
না,আমার লগে কে করবে?আমার যে চেহারা।
হ তোর চেহারা কি খারাপ নাকি,তোর চেহারা রাজপুত্রের নাহান।
হুম এই কারনেই তো কোন রাজকন্যা পেলাম না।
পাবি অবশ্যই পাবি।পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পর, আল্লাহর কাছে যা চাবি তাই পাবি।
আচ্ছা আমি এখন বাইরে গেলাম।
আচ্ছা, তারাতাড়ি ফিরিস।
না দেরি হবে।
কেনো?
বউ নিয়া আসবো তো তাই।
ফাজলামি করিস, যা বাগ.

ঐ শাকিল ভাই!
হুম বলেন,
ঐ সময় এইখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম?
নামাজ পড়ছিলাম।
এইখানে দাঁড়িয়ে?
হুম
কেমনে?
তা তুমি বুঝবা না।তুমি এখন এখান থেকে যাও।


হ্যালো সুমাইয়া!আজ কি দেখা করতে পারবা?
কি কারনে?
দশ টাকার বাদাম খাওয়াবো বলে।
কি?
না কিছু না।বলছিলাম তোমায় অনেক দিন দেখি না।
বিকাল পাঁচ টায় আসবো।
লাল বেনারসি শাড়ি পড়ে এসো,যেনো নতুন বউ।
তোমার মাথা কি খারাপ হইছে?কি সব আবল-তাবল বকছো।
তোমায় বউয়ের সাজে কখনো দেখিনি তো তাই।
তোমার নিশ্চয়ই কোন কু মতলব আছে।
কু মতলব!তাও আমার।আচ্ছা লাগবে না।
ঠিক আছে,দেখি কারো কাছে বেনারসি শাড়ি পাই কিনা।
ঠিক আছে।
কোথায় আসবো তা তো বললে না।
যাত্রাবাড়ী
আচ্ছা।

ওয়াও তোমায় দারুন লাগছে।
সত্যি?
না মিথ্যে।
কি?
কিছু না।
এখন আমরা কি করবো?
সুইজারল্যান্ড যাবো।
What?
হানিমুনে। কি তুমি যাবে না?
সাকি! এখন এইমুহূর্তে তুমি আমার সাথে ফাজলামি করা বন্ধ করবে প্লিজ ...
আচ্ছা পরী ক্ষমা করো এই অদমকে।
করলাম,চলো কোথাও গিয়ে বসি।
চলো বাসায় গিয়ে বসি।
বাসায়?
হুম,তোমার শাশুড়ী তোমার জন্য বরণডালা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
Really??
Yes..My dear Queen.

চলো তাহলে শাশুড়ীকে সাক্ষাৎ দিয়ে আসি।

মা তোমার বউ নিয়ে এসেছি।
কি??


সাকি"পর্ব ০৫"


সুমাইয়া... সুমাইয়া....
কি ডাকছো কেন?
বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে।
হুম,তাহলে কি করবো?
আজ খিচুড়ি করো,খুব মজা হবে।
খিচুড়ি?আমি পারবো না।
কেন?
আমার খিচুড়ি ভালো লাগে না।
তাতে কি হয়েছে,আমার তো ভালো লাগে।
তাহলে তুমিই রান্না করে খাও।
আচ্ছা ঠিক আছে তুমি যাও..

হ্যালো মা!
কেমন আছিস বাবা?
ভালো আছি মা।
আজ বাসায় আসিস,তোর জন্য গরুর গোস্তো দিয়ে ভুনা খিচুড়ি রান্না করেছি।
মা..
হুম বল
এখন-ই আসছি।

মা..
কি কিছু বলবি?
না।
তাহলে?
মা আমি তোমাকে খুব ভালবাসি।
ওরে আমার কালা চান রে,আমি ও তোমায় ভালবাসি খুব অনেক খুব।
মা তোমায় ছাড়া থাকতে ভালো লাগে না,ঐ বাসাটা কেমন যানি শূন্য শূন্য লাগে।
আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে,বউমা কেমন আছে?ওর কথাতো ভুলেই গেছি।
ও ভালো আছে,ওর রাজ্যে যেমন থাকা উচিত।
কিরে আবার ঝগড়া করেছিস?
না ঝগড়া না,ওকে খিচুড়ি রান্না করতে বলছিলাম।তাই ও রাগ করছে।
ওর যেটা পছন্দ না সেটা ওকে করতে বলিস না, সব ঠিক হয়ে যাবে।
তোমার কাছে তো সবই ঠিক।
তাহলে তুই কি চাস আমি তোর বউয়ের বদনাম করি?
না,তা কেন।আচ্ছা মা আজ আসি।সন্ধ্যা হয়ে এলো।
তাহলে এখন ওঠ,আর একটু থাকলে হয়তো তোর বাবার সাথে দেখা হতো।না থাক এতোক্ষন বসে থাকা লাগবে না।
মা চলি..
পৌছে ফোন দিস।
আচ্ছা.

ঠক্ ঠক্ ঠক্
দরজা খুলতে এতোক্ষণ লাগলো?
টয়লেটে ছিলাম।
ও।
মা-বাবা কেমন আছে?
ভালো।
তুমি আমায় বললে আমিও তোমার সাথে যেতাম।
অন্য একদিন যাবো।
ওকে.তোমার খাবার দিবো।
হাত-মুখ ধুয়ে আসি,তুমি খাবার বাড়ো।
আচ্ছা।
খিচুড়ি?
হুম,তুমি না খেতে চাইলে।
না তা ঠিক আছে কিন্তু তুমি তো না করলে।
তোমার সাথে মজা করেছি।
তুমি মজা করতেও পারো।
আমি সব পারি তোমার মুখের হাসি দেখার জন্য।
তাই।
হুম
সুমাইয়া!
হ্যা।
তুমি জানো তোমায় আমি এতো ভালবাসি কেন?
না।
কারণ তুমি আমায় প্রতিনিয়ত আশ্চর্য করো।
তুমি জানো তোমায় আমি এতো ভালবাসি কেন?
কেন?
কারণ তুমি অল্পতেই বিরক্ত হও।
আর হবো না।
তাহলে তো আমার ভালবাসা কমে যাবে।
আরো আরো বেশি হবো,ঠিক আছে।
হুম ঠিক আছে।


ওহে হিমু সাহেব ঘুম থেকে উঠেন।
কেন কি হয়েছে?
আজ শুক্রবার।
হুম তো।
আজ আপনার রান্না করার দিন।
কি?কবে থেকে এ নিয়ম চালু হলো।
আজ সকাল থেকে।
সারাদিন কি বসে বসে নিয়ম বানাও নাকি?
হুম বানাই,এখন উঠে রান্না করো।
আচ্ছা করছি,তা রাণী সাহেবা আজ কি রান্না করবো?
বিরয়ানী।
একটা সহজ খাবার হলে ভালো হয় না।
না,আজ এটাই খাবো।
আচ্ছা, যথা আদেশ রাণী সাহেবা।


হ্যালো কে?
আমি রামি।
তুই এখন ফোন করলি কেন?
দোস্ত তুইতো অনেক ভালো রান্না পারিস।
হুম,সে কারনেই তো বিয়ের পরও রান্না করতে হচ্ছে।
কিরে তোর বউও!
তোর বউও মানে?
মানে আমিও রান্নাঘরে,রান্না করছি।কিন্তু কিছুই পারছি না।একারনেই তো ফোন দিলাম তোর সাহায্য নিতে।
আজ কি সব পুরুষ ই রান্নাঘরে?
তা জানা নেই।কিন্তু এটুকু বলতে পারি যে নারী তার স্বামীর উপর কর্তৃত্ব দেখাতে পারে সেই স্বামীরা রান্নাঘরে।তা তোর জন্য তো ভালোই।
কেন?
তুই তো রান্না পারিস।
রান্না পারি বলে কি ছুটির দিনটা রান্নাঘরে কাটাবো।
সাকি,রান্না করা ছেড়ে তুমি কার সাথে আলাপ জুড়েছো।
না রান্না করছি।
হায়রে কপাল, শেষে কিনা হিমু হতে যাওয়া সাকি বউয়ের কারাগারে আটকা পড়লো।




(সমাপ্ত)


#story

Comments

Popular Posts