ছায়ামূর্তি (প্রথম পর্ব)

ছায়ামূর্তি (প্রথম পর্ব)
          শাকিল মাহমুদ


রাত এখন দুটো। কামরার দরজাটা খুলতেই অদ্ভুত এক নারী ছায়ামূর্তি সামনে এসে দাঁড়ায়। কিছু বুঝে উঠার আগেই আমার হাতটি জাপ্টে ধরে ঘর থেকে বাইরের রাস্তা ধরে। কিছু বলতে যাবো তখনি বলে উঠে,"ভয় পাবেন না"।

এরপর টানা পাঁচ মিনিট কারো মুখে কোন কথা নেই। আমিও কি অদ্ভুত পাগল তার সাথে হেঁটে যাচ্ছি। আমি এক ঝাপটায় হাতটা টান দেই এবং দৌড়ে পালাই। বাসায় এসে সবকিছু বন্ধ করে দিয়ে কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়ি। এই কনকনে শীতেও আমি  ঘামছিলাম।
বাহির থেকে অনেক কান্নার আওয়াজ আসলো কিন্তু আমি ওসবে কান না দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।

সকালবেলা দরজায় কঠিন আঘাতের শব্দে ঘুম ভাঙলো।

দরজার সামনে একদল পুলিশ কর্মী।তারা আমার দিকে ঈগলের দৃষ্টিতে তাকিয়ে,যেন আমি কোন মাছ। 
স্যার কি হয়েছে? কি হয়েছে মানে তোমার বাসার পিছনে একটি মেয়ের দেহ পাওয়া গিয়েছে। স্যার মৃত না জীবিত? জীবিত কেন,মৃত হলে ভালো হতো? 
না স্যার সেটা নয় আমি এমনিতেই জিজ্ঞেস করছিলাম।
চলো।
কোথায় স্যার?
থানায়, যতক্ষণ পর্যন্ত মেয়েটার জ্ঞান না ফিরে ততক্ষণ পর্যন্ত।
থানায় যাওয়ার আগে হাসপাতালে চলো,মেয়েটাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। 
আচ্ছা স্যার।
পুলিশের ভ্যানের একপাশে মেয়েটি অন্য পাশে আমি।আমরা দুজন ছাড়াও ভ্যানে  তিনজন দারোগা উপস্থিত। আমি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইলাম,কতক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম জানিনা।
হঠাৎ মনে হল মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি প্রথমে নিছক কল্পনা ভাবলেও হঠাৎ মেয়েটি আমার হাত আঁকড়ে ধরলো।
আমি তাকাতেই দেখি সে আমার সামনে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। আমার চেহারা ফ্যাকাসে সাদা বর্ণ ধারণ করল, ভয়ে আমার হাত পা ঠান্ডা হতে লাগলো।

চোখে পানির ছিটায় হুশ ফিরলো। দেখি মেয়েটি আমার চোখে পানি দিচ্ছে। আমি ভয়ে একলাফে অন্যস্থানে ছিটকে পড়ি।
দেখলাম পুলিশের লোকরা কি যেন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিল। আমি কাছে গিয়ে দেখতে চাইলাম, আমি থমকে যাই। আমার এবং মেয়েটির নিথর দেহ দুজন কে পাশাপাশি শোয়ানো আছে।

ঠান্ডা একটি হাত আমার কাঁধ স্পর্শ করল,তাকাতেই দেখি সেই মেয়েটি। মেয়েটির মুখে অদ্ভুত এক হাসির আভাস চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছিল।
আমি কি মারা গিয়েছি?
মেয়েটি আবার হাসলো।
কি কথা বলছেন না কেন?
না আপনি মারা যাননি।
তবে ওইখানে আমার দেহ পড়ে রয়েছে আর আমি এখানে সেটা কিভাবে সম্ভব?
আমার রাগান্বিত কথায় মেয়েটি হাসলো।আমার প্রচন্ড রাগ হলেও নিজেকে সংযত করে মেয়েটিকে আবার জিজ্ঞাসা করলাম। সে কিছুই বলছে না। সে ক্রমাগত হেসেই যাচ্ছে। অতঃপর সে কিছু হাবিজাবি কথা বললো, যার একূল-ওকূল আমি কিছুই বুঝলাম না।

চোখ খুলতেই আমি নিজেকে হাসপাতালের বেডে শোয়া দেখলাম। দারোগা স্যার বলে উঠলেন, কি হে বাপু তোমার আবার কি হলো?
কিছু না স্যার।
তাহলে এরকম জ্ঞান হারালে যে?
কিছু মনে পড়ছে না স্যার।
আচ্ছা শুয়ে আরাম করো পরে কথা হবে।

মেয়েটির কথা সত্যি আমি মারা যাইনি। তাহলে মেয়ে টি যা যা বলেছে তা কি সবই সত্যি? তবে যে আমায় ওই স্থানে গিয়ে চেক করতে হবে। যদি সত্যি হয় তবে আমরা সবাই বিপদে আছি। আর একথা কাউকে বলা যাবে না কারণ এই অদ্ভুত কথা কেউ বিশ্বাস করবে না। আমাকেই কিছু করতে হবে।
এখন প্রথম কাজ হাসপাতাল থেকে পালানো...

চলবে......

Comments

Popular Posts