ছেঁড়া ডায়েরি




ছেঁড়া ডায়েরি 

(সমস্ত চরিত্র কাল্পনিক কিন্তু অবাস্তব নয়)

(২৪ জানুয়ারি ১৯১২ রোজ বুধবার)

আজ আমাদের স্কুল বন্ধ তবুও আমাদের স্কুলে যেতে হবে।রাজপুত্র প্যারিস ড্যানিচকা আমাদের গ্রামে প্রথমবার আসছেন।তাকে সংবর্ধনা দিতে আমাদের যেতে হবে।

ও তোমাদের সাথে তো আমার পরিচয়-ই হলো না।
আমার নাম ক্রাসটেন উইলভার,আমার গ্রামের নাম এটেনসিভ।
এটেনসিভ রাজধানী ওয়ান্ডার একটি ছোট শহর এবং ওয়ান্ডা হলো প্যারাডাইস দেশের সবচেয়ে বড় শহর এবং রাজধানী।
আর এসব লিখছি বাবার পুরোনো কাগজপত্রের মিশ্রণে তৈরিকৃত এক অদ্ভুত খাতায়,যে খাতাটা তৈরি করেছে মা।
মা এর নাম রেখেছে ডায়েরি।আমি একটু বাড়িয়ে বলি ছেঁড়া ডায়েরি কারণ ডায়েরিটির অনেকটা অংশই ছেঁড়া।আমি আর আমার ছোট বোন এ্যানি সকাল হতেই তৈরি হতে লাগলাম।

রাস্তায় এত মানুষের উপস্থিতিতে আমাদের স্কুলের বন্ধুদের খুঁজে পেতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছিল।এত মানুষের ভিড়ে আমি একটি মানুষকে খুব করে খুজঁছিলাম,সোফিয়া!কোথাও ওকে খুঁজে পাচ্ছি না।আজ নিয়ে ছয়দিন হলো ওকে দেখতে পাইনি।ওকে না দেখলে বুকের ভিতরটা কেমন জানি হাহাকার করে উঠে।এতো মানুষ এখানে তবুও কেমন জানি নিজেকে একাকি মনে হয়।
ওহ না এ্যানি কোথায়?আমি ওকে হারিয়ে ফেলেছি।
এতো মানুষের ভিড়ে এ্যানিকে কোথায় খুঁজবো? 
অনেকক্ষণ খুঁজে ক্লান্ত হয়ে রাস্তার পাশে বসে পড়লাম।অনেকগুলো খারাপ চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।আমি আস্তা একটা গাধা,এখন মাকে কি বলবো।

হঠাৎ আচমকা কান্নারত চোখ সামনের দিকে তাকালো,সামনে সোফিয়া।ফ্যালফ্যাল নয়নে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।এটাকি আমার ভ্রম নাকি সত্যি। উইলভার! উইলভার! ডাকে সাড়া ফিরলো আমার।ও বললো;তুমি এখানে কি করো?
এ্যানি!এ্যানিকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছিনা।ওর মুখে কিঞ্চিত হাঁসি ফুটে উঠলো।হঠাৎ ওর পিছন থেকে একটা মেয়ে ছুটে এসে ঝাপটে ধরলো আমায়।মেয়েটি এ্যানি,আমার চোখ মুখ খুশিতে জ্বলজ্বল করছে।আজকের দিনটি আমার জীবনের সেরা দিন।

সূর্য পশ্চিম আকাশে অস্তমিত, বিকেল ঘনিয়ে সন্ধ্যা নেমে এলো।
সোফিয়াকে বিদায় জানিয়ে বাসার দিকে চলে আসলাম। আজকের দিনের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো মাকে বললাম না,মা রাগ করতে পারে তাই।চটপট করে খাবার শেষ করে আমার কামড়ায় চলে আসলাম।
বাসার সবাই ঘুমিয়ে যাওয়ার পর এখন লিখছি,আনমনে।

(১০ ফেব্রুয়ারী ১৯১২ রোজ শনিবার)

১৬ দিন পার হয়ে গেল,আজ মন বলছে কিছু লিখি।এই ষোল দিনে বিশেষ কিছুই ঘটেনি তাই লেখা হয়ে উঠেনি।
আজ স্কুলে একটা চমকপ্রদ ঘটনা ঘটেছে তাই মন চাচ্ছে কিছু লিখি।
মার্গারেট গ্রিবিন নামে সুন্দর একটা মেয়ে আমাদের ক্লাসে নতুন ভর্তি হয়েছে।এতদিন এই ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে ছিলো সোফিয়া,আজ মনে হচ্ছে ওকে টেক্কা দিতে এই মেয়ে হাজির।
আমার মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকা সোফিয়ার নজর কেড়েছে,ও আমার দিকে কড়া দৃষ্টিতে তাকালো। আমি মুচকি হাসি দিয়ে বইয়ের দিকে তাকালাম।
আমাকে অবাক করে দিয়ে স্যার মেয়েটিকে আমার পাশে বসালো।মেয়েটি যত আমার কাছে আসতে লাগলো তত আমার বুক থরথর করে কাঁপতে লাগলো ঠিক এমনটি হয়েছিলো সোফিয়ার সাথে প্রথম দেখায়।
মার্গারেট এত সুন্দর আমার খালি চোখ বিশ্বাস করতে পারছিলো না।এতদিন আমি মনে করতাম সোফিয়া পৃথিবীর সেরা সুন্দরী আজ আমার ভুল ভাঙলো।কথায় আছে না প্রেম মানুষকে অন্ধ করে, সোফিয়ার প্রেমে এতদিন আমি অন্ধ ছিলাম। 
মেয়েটি সুন্দর এক হাসি দিয়ে আমায় আমার নাম জিজ্ঞেস করলো।আমি মুগ্ধ হয়ে ওর হাসি দেখলাম আর শুনলাম। যেন মধু ঝরছিলো ওর মুখ বেয়ে।
ক্লাস শেষ হতে সোফিয়া আমার সাথে কথা না বলে চলে গেল।
আমি সবকিছু বুঝেও না বোঝার ভান করে বাড়ির পথে হাটা দিলাম।

(১২ ফেব্রুয়ারি  ১৯১২ রোজ সোমবার)

আজকে ক্লাসে প্রবেশ করতেই দেখতে পেলাম সোফিয়া আমার পাশের সিটে বসে আছে, জিজ্ঞেস করতেই বললো"এখন থেকে আমি এখানে বসবো আর তোমার চোখ আমার দিকে থাকবে, না অন্য কারো দিকে। কি আমার কথা মাথায় ঢুকলো।"
আমি বুঝ বালকের মতো সোফিয়ার পাশে বসলাম এবং চুপচাপ থাকলাম। মার্গারেট ক্লাসে প্রবেশ করতেই আমার চোখ তার দিকে গেল, সোফিয়া আমার পিঠে জোরালো এক চড় দিলো এবং বললো,"আমি থাকতে অন্য কোন মেয়ের দিকে তুমি যদি তাকাও তাহলে আমি আর তোমার সাথে কোন রকম সম্পর্ক রাখবো না। আমি নিশ্চুপ থাকলাম।

হঠাৎ আমাদের ক্লাসের মটু ড্যানি দৌড়ে ক্লাসে প্রবেশ করল এবং বলল,"ওই আমাদের স্কুলে রাজপুত্র এসেছে"।
সবাই দৌড়ে তাকে দেখতে গেল। আমি নিশ্চুপ মনে বেঞ্চে বসে রইলাম এবং খাতায় আঁকিঝুকি করছিলাম।
হঠাৎ দেখলাম প্রিন্স প্যারিস ড্যানিচকা আমাদের ক্লাসে হাজির। আমরা সবাই হতভম্ব হয়ে গেলাম।
সে মার্গারেট কে দেখিয়ে বলল,"এ হলো আমার হবু স্ত্রী প্রিন্সেস মার্গারেট গ্রিবিন এর থেকে সবাই দূরত্বে থাকবে এবং এর যদি কোন সমস্যা হয় তাহলে তোমাদের খবর আছে।"
আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলাম রাজপুত্র একি বলছে।
রাজপুত্র চলে গেল সাথে করে মার্গারেটকে নিয়ে, ক্লাসে এখন সুনসান নীরবতা কেউ কোনো কথা বলছে না কারণ তারা হতভম্ব তাদের সাথে প্রিন্সেস পড়ছে। সোফিয়া আমার পাশে এসে বসলো, কিছুক্ষণ পর সে বলল,"কি তাকাও আরো বেশি করে তারপর বুঝবে ঠেলা।"আমি কোন কথা বললাম না। আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি না প্রিন্সেস মার্গারেট সে আমার পাশে বসে ছিল এবং সে আমার সাথে কথা বলেছিলো।

চলবে.......

Comments

Popular Posts