শেষ চিঠি

"শেষ চিঠি"
     শাকিল মাহমুদ্
   

অফিস ফিরতি মানুষের কোলাহলে,পড়ন্ত বিকেলে ব্যস্ত
ঢাকার ব্যস্ততা বহুগুনে বেড়ে যায়।সকালে সবার চোখে-মুখে
সজীবতা থাকলেও পড়ন্ত বিকালে সবার চোখে-মুখে
 বিষন্নতার ছাপ স্পষ্ট।
এদের ভিতর সজীব সাহেবের চেহারাখানা
খু্ঁজে পাওয়া কঠিন নয়।নামটা সজীব হলেও তাকে দেখে
কেউ ই সজীব বলবে না।
তার চেহারাখানা দেখে মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে অসুখী মানুষটা তিনিই।বয়স ৩২ হলেও দেখে মনে হয় ৫০ বছরের বুড়া।তার জীবনের আনন্দ রাখা আছে তার বাসার টিভিতে,
ওটা দেখে-ই সময় কেটে যায়।

বরা-বরের মতো আজও তার চেহারাখানা মলিন,প্রোমোশন হবে-হবে বলে আর হলো না।জীবনে কত কিছুই না ত্যাগ করলো এই চাকরির জন্য,তবুও চাকরি তার আপন হলো না।
মানুষের জীবনটা এরকম-ই,তুমি যার জন্য ত্যাগ করবে সেই
তোমাকে দূরে ঠেলে দিবে।এটাই পৃথিবীর চিরা-চরিত নিয়ম,এ নিয়ম কারো বেলায় পরিবর্তনশীল নয়।সজীব সাহেবের জীবনটা এমন-ই এক ঘাটের পানি।


আসেন....আসেন....বাস ছাইরা দিল......
হ্যালপারের কর্কশ ধ্বনি অনুসরন করে-বাস পানে এগিয়ে গেল
সজীব।
স্যার একটাই সিট আছে তাড়াতাড়ি আন, নইলে কিন্তু দাড়াঁইয়া যাওয়া লাগবো।
তড়িঘড়ি করে বাসে উঠলো সজীব;কৈ তোর একখান সিট?
বাসতো পুরা ভরা।
পিছনে খালি আছে;হ্যালপার বললো।
পিছন থেকে ডাক এলো,ভাই পিছনে আসেন।
সে পিছনে চলে এলো,হ্যা সিট খালি আছে তাও একটাই।
সজীবের এখানে আসা দুটি লোকের ভাল লাগলো না,তারা
নাক ছিটকাতে লাগলো।
সজীব ঠেলাঠেলি করে সিটে বসলো।তার পাশের বিশাল দেহী
দু লোকের খুব অসুবিধে হলো।তারা চাপা-চাপি করতে লাগলো,বিশাল দেহ অধিকারী মানুষের চাপে হ্যাংলা পাতলা
সজীব চ্যাপা শুটকী হয়ে গেল।
এখন মূল গল্পটা আমরা সজীবের মুখেই শুনি,
যাত্রাবাড়ী  আসতেই বাস প্রায় খালি,আমি মাঝ বরাবর সিটে
এসে বসলাম।আরামছে বসে এয়ারফোনে গান শুনছিলাম।
হঠাৎ জুতার নিচে খসখস শব্দে নিচে তাকাই,অর্ধেক ছেঁড়া
একটি চিঠি।কৌতূহলী মন চিঠিটা পড়তে আগ্রহী হলো।
কিন্তু অন্যের চিঠি পড়া কি ঠিক?অনেক দ্বিধা-দন্ধের পর
চিঠিটা পড়তে লাগলাম।

         ‘‘প্রিয় সেঁজুতি,
          জানি তুমি ভাবছো কেন এই চিঠি।
          তুমি তো এই চিঠি চাওনি।তুমি তো
          আমার জন্য অপেক্ষা করছিলে,
          আমার তোমায় নিয়ে আসার কথা ছিল।
          তবে কেন এই চিঠি?সেঁজু আমি তোমায়
          ভালবাসি সেটা মিথ্যে নয়।প্রথম যেদিন
          তোমায় দেখি,সেদিন ই তোমার প্রেমে পরে
          যাই।তোমার ঐ নিষ্পাপ অবাক চাহনিযুক্ত
          মুখখানা আমায় পাগল করে দিয়েছিল।
          তুমি আমার প্রথম ও শেষ প্রেম,আমি
          কখনো তোমায় ভুলতে পারবো না।
          তোমার মতো প্রেমিকা পাওয়া আমার জন্য
          সাত জন্মের ভাগ্য।কিন্তু এতকিছুর পর ও
          আমার পরিবার আগে,তাদের কথার উপর
          আমি যেতে পারবো না।আমি জানি তুমি
          মা হতে চলেছো কিন্তু আমি....................„



চিঠিটা এ পর্যন্তই,বাকিটা আর পাওয়া গেল না। এর পর মনে
হয় এমন কিছু লেখা ছিল যা মেয়েটিকে কাঁদিয়েছিল;খুব কাঁদিয়েছিল।কি এমন লেখা ছিল? যাতে মেয়েটি ঐ অংশ
ছিঁড়ে ফেলতে বাধ্য হল।আমি অনেক কিছুই চিন্তা করলাম।
তবুও কিছুই মিলাতে পারলাম না।কেন এমন হলো,কেন
ছেলেটির পরিবার মেয়েটিকে মেনে নিবে না,মেয়েটির বাচ্চার
বাবা কে?নানা রকম প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
এত প্রশ্নের উত্তর একজন ই দিতে পারে সে হলো মেয়েটি।
বেশি খোঁজা লাগলো না,নিচেই চিঠির খামটি পাওয়া গেল।
 অনেক কষ্টে খোঁজা-খুঁজির পর ঠিকানাটা ও পাওয়া গেল।

রাত অনেক হয়েছে তাই আজ নয় কাল যাবো,বাসায় এসে
তারাতারি ঘুমিয়ে পরলাম;কাল ভোর বেলায় উঠতে হবে যে।
রাতে সুন্দর একটি স্বপ্ন দেখলাম,সেই মেয়েটিকে।কত-ই না
সুন্দর-অপরুপ,একবার দেখলে বারবার দেখতে মনে চায়।
আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি,সে এটা বুঝতে পেরে মুচকি
হাঁসি দিল।আমি তার প্রেমে পড়ে গেলাম।

মুয়াজ্জিনের মধুর আজানে ঘুম ভাংলো।দ্রুত উঠে পড়লাম,
স্বপ্নের কথা ভাবতেই লজ্জা পেলাম।এসব আমি কি ভাবছি।
এসব ভাবনা কি ঠিক।তড়িঘড়ি করে প্রস্তুত হয়ে বের হয়ে
এলাম।উবারে করে চলতে লাগলাম।অনেক দ্রুত-ই পুঁছে
গেলাম।আমি ভিতরে ভিতরে খুব-ই উত্তেজিত ছিলাম,কেননা
প্রথম কোন মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি।তাও অচেনা এক
মেয়ে।

সাদা রংয়ের দু'তলা এক বাড়ি,দেখে মনে হয় আভিজাত্যের
ছোঁয়ায় ভরপুর।নিশ্চই ধনীর দুলালী। বাড়ির সামনে আসতেই
লোকজনের ভরপুর অবস্থা দেখতে পেলাম।মহিলাদের কান্না ও
পুরুষদের চিৎকারে বুঝতে বাকি রইলো না কি হয়েছে।
সবার মাঝে একটি মেয়ের নিথর লাশ পড়ে রয়েছে,যাকে
কেন্দ্র করে শত মানুষের বুক ফাঁটা আর্তনাদ। আমি তার কাছে
এসে দাঁড়ালাম,সত্যিই সে অপরুপ;তার তুলনা হয় না।সেঁজুতি
হিন্দু ধর্মের একটি মেয়ে,আমার আর কিছুই বুঝতে বাকি রইলো না।
আমি অপলক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম,আমার মুখ
থেকে একটি কথাই বের হলো;সেঁজু তুমি আমার স্বপ্নেই ছিলে
সারা জীবন স্বপ্নেই থেকে যাবে।হ্যা..আমার জীবন এলোমেলো
ছিল,আজ সেটা ছিন্ন-বিন্ন হলো।।


(ভালবাসা কখনো বলে কয়ে আসে না,সে রঙধনুর মতো;এই আসে তো এই আসে না।)


                                 {সমাপ্ত}




Comments

Post a Comment

Popular Posts