রুবি(Rubi)
শাকিল মাহমুদ্
খুশিতে মনটা আন-ছান করছে,কি বলে কি বলি বুঝতেই পারছি না।আজ সে বললো,হ্যা সে কথা বললো।আমি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ছিলাম;আনমনে ওর কথা ভাবছিলাম।
হঠাৎ কে যেন আমায় ডাক দিল,পিছন ফিরে তাকাতেই
আমি থ.ম. খেয়ে গেলাম।কি যে বলবো বুঝতেই পারছিলাম
না,অনেকক্ষন ওর দিকে তাকিয়ে থাকি পরক্ষনে ওর কথায় আমার সন্ধি ফেরে।
কি?
ওমন করে কি দেখিস?
আমায় কি এই প্রথম দেখলি?
কি? কিছু বলবি না।
আমি বললাম,
থামো..থামো এত প্রশ্ন করো না,
উত্তর দিতে পারবো না।
রুবি বললো,
কেন?
কেন পারবি না?
প্রশ্নতো সহজ ই।
আমি বললাম,
ঠিক আছে,
প্রশ্নটা সহজ, উত্তর টা কিন্তু কঠিন।
রুবি এক গাল হেঁসে বেলকনি ত্যাগ করলো।
রুবির এরকম চলে যাওয়াটা আমি তাকিয়ে তাকিয়ে
দেখছিলাম।রুবি এ রকম হাঁসলো,তার মানে কি ও সব বুঝতে পেরেছে। আমি যা ওকে বলতে চাই,তা সব ই কি ও বুঝতে পেরেছে।এই চিন্তা করতে করতে এক সময় আমি অট্ট হাসিতে ফেঁটে পড়লাম।
আমার হাঁসি শুনে ও আবার ফিরে এলো,
কি?
এমন করে হাঁসছো যে?
আমার হাঁসির শব্দে,ওর কোন কথাই আমি বুঝতে
পারলাম না।
খালাম্মা যা বলেছে তা ঠিক-ই,তুই সত্যিই পাগল
হয়ে গিয়েছিস।
পাগল?
কে,আমি?
হুম, তুই-ই।
নাহলে কেউ এমন করে হাঁসে।
না..না..ঐ পুরানো এক কথা মনে পরলো তাই হাসলাম আর কি।
তা..তুই জানি কি বলবি বলে এসেছিস?
হা..আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম,
রুবি তার ব্যানিটিব্যাগের ভিতর হাত দিয়ে
একটি কার্ড বের করলো।
কিরে,এটা কিসের কার্ড?
তোর বিয়ের কার্ড নাকি?
এ বলে আবার হাঁসি দিল শাকিল।
হুম,
বিয়ের কার্ড,
আমার।
শাকিল আচমকা বিদ্যুতের শর্ট খেল।
কি?
তোর বিয়ে,
কার সাথে?
কখন?
ঐ তোর মনে আছে?আমার কাজিন জাহিদ এর কথা।
হুম, তোর গত জন্মদিনের দিন দেখে ছিলাম।
কেন? ওর সাথে কি বিয়ে?
না..না..ওর বড় ভাইয়ের সাথে।
নাম কী?
জিসান।
ওহ..জিসান-জাহিদ নাম দুটোতে অনেক মিল।
আচ্ছা ভাল থাকিস,নতুন বরের সাথে।
তুই আমার বিয়েতে অবশ্যই আসবি।
সাথে খালাম্মাকে নিয়ে,
সবার আগে তোর আসা চাই।
শেষের কথাগুলো ভাল করে শুনলো না শাকিল।
অন্যমনষ্যকা হয়ে অতীতে র স্মৃতিগুলো ভাবতে
লাগলো।কতই না রঙ্গিন ছিল সেই স্মৃতিগুলো,
শাকিল কখনোই ঐ সৃত্মিগুলো ভুলতে পারবে না।
ছোট থেকে এক সাথে বড় হওয়া,একসাথে স্কুল-কলেজে পড়া।
রুবি অনেক আগেই রুম থেকে বের হয়ে গেছে
শাকিলের ঐ দিকে কোন খেয়াল ই নেই।
মায়ের ডাকে সন্ধি ফিরলো শাকিলের,
হা,
মা আসছি।
কিরে রুবির নাকি আগামী শুক্রবার বিয়ে?
তুই যাবি নাকি??
জানি না,তুমি গেলে আমি গাড়ি করে দিয়ে আসবো।
এমন করে কথা বলিস কেন?
কিছু হয়েছে?
না,কিছুই না।
আর কিছু বলবা।
না,আর কিছু বলবো না।
মা কিছুক্ষন চিন্তা করে বললো,
এখন তুই যা।
আজ শুক্রবার।শাকিল সকাল বেলা মাকে রুবির
বাসায় দিয়ে,বাসায় চলে আসলো।ওখানে ওর
কোন কিছুই ভাল লাগছিল না;নিজেকে খুব অসহায়
মনে হচ্ছিল।নিজের প্রেমিকার বিয়ে খাবে;হাসি মুখে। শাকিল এরকম ছেলে নয়।
শাকিল বাসায় এসে কিছু লিখতে বসলো,শাকিলের যখন মন খারাপ থাকে;তখন-ই শুধু লিখতে বসে।
সে আজ রুবি কে নিয়ে অনেক কিছু লিখছে..
সুমাইয়া! হা রুবির আসল নাম সুমাইয়া।
শাকিল ভালবেসে সুমাইয়াকে রুবি নামে ডাকে।
সব মেয়েরাই এক,
আমি ওকে বলিনি ঠিক।
কিন্তু ও তো বুঝতে পারতো আমি ওকে
ভালবাসি।নাকি যেনে বুঝেই ও এরকম টা করছে।
আচমকা কলিংবেলটা বেজে উঠলো,এখন কে
আসবে;এখন তো কারো আসার নয়।
একটু দেরি করেই দরজাটা খুললো শাকিল।
দরজাটা খুলতেই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো
শাকিল।এ কি স্বপ্ন...?
দরজার ওপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে রুবি।
কোন বাক্যলাপ না করেই ঘরে ডুকে পরলো রুবি।
শাকিল অপলক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে রইলো রুবির দিকে।এ যেন অন্য রুবি,এ রুবিকে সে কখনো
দেখেনি ; লাল বেনাড়শীর সাথে সারা গাঁয়ে গয়না।
এ তো বিয়ের সাঁজ।আজতো রুবির বিয়ে,বিয়ে
ছেড়ে সে এ বাড়ি তে?
শাকিল কিছু বলবে,তার আগেই রুবি বললো;
কিরে গাধা,
কবে বলবি,নিজের মনের কথা?
কবে বলবি,তুই আমায় ভালবাসিস?
আমার বাচ্চা-কাচ্চা হবার পর বলবি?
শাকিল কনো কথা বলতে পারলো না,
ওর চোখ বেয়ে পানি পরতে লাগলো।
হ্যা..হ্যা..এখন কাঁদো।
কাপুরুষ কোথাকার?
আমায় কাঁদিয়ে এখন উনি কাঁদে।
হ্যা,আমি কাপুরুষ কিন্তু তুই?
আমিতো বলতে গিয়েও পারিনি বলতে,
তুই তো পারতি,তুইতো সুকন্যা।
আর কথায় আছে না,লেডিস ফার্স্ট।
ও তাই বুঝি,সবখানে ম্যান ফার্স্ট বলে চিল্লাছ
আর এখানে লেডিস ফার্স্ট।
বদমাইশ কোথাকার?
এ বলেই রুবি শাকিল কে জড়িয়ে ধরলো,
শাকিল ও রুবিকে জড়িয়ে ধরলো।
★ হয়েছে,আগে বিয়েটা তো হতে দে,
মা, তুমি?
তুমিই তাহলে,
মায়ের মুখে হাস্যজ্বল ভাবটা ফুটে উঠলো।।।।
[সমাপ্ত]
Comments
Post a Comment